শাহজালালের মাজার জিয়ারত করা হলো না তাদের

কথা ছিল সবাই মিলে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করবেন। সেজন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে মাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তারা। কিন্তু সেই যাত্রা মাঝপথেই থেমে গেছে।

শুক্রবার (৬ মার্চ) ভোররাত আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। হতাহতদের সবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায়।

বিজয়নগর উপজেলার ভাটি-কালিসীমা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসটির (ঢাকা মেট্রো- চ ১১৩৮৬৭) সঙ্গে সুনামগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী লিমন পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্রো- ব ১৫০৪৮৭) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডারে লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়ে আগুন ধরে যায়। দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে আগুন। ভেতরে থাকা আরোহীরা তখন বাঁচার জন্য আর্তনাদ করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে মারা যান শাকিল (২৫), সোহান (২০), সাগর (২২), ইমন (১৯), রিফাত (১৬) ও হারুন (৪০)।

এ ঘটনায় আহত হন শাহীন (৩০), জিসান (২৪), আবির (১৯) ও বিজয় (১৯)। তাদেরকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত জিসান জানান, তিনি ও তার বন্ধু সাগর একসঙ্গে বসেছিলেন। বাসের সঙ্গে তাদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার পর তিনি ‘মনে হয় এবার আমি শেষ’ বলে মাইক্রোবাস থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। সাগরসহ অন্য আরোহীরা মাইক্রোবাসের ভেতরই ছিলেন। সাগর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

দুর্ঘটনায় বাসটিও মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। তবে বাসের কোনো যাত্রী তেমন জখম হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাইক্রোবাসটিতে আগুন জ্বলতে থাকার সময় ভেতরে থাকা আরোহীরা সাহায্যের জন্য আকুতি জানালেও আগুনের ভয়ে কেউই এগিয়ে আসেনি।

 

আগুন নেভার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক এক করে পাঁচজনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ বের করেন মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া পাঁচজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে একজন মারা যান।

খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রেমধন মজুমদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই আমরা ঘটনাস্থলে আসি। অনেককে সাহায্যের জন্য ডেকেছি। কিন্তু আগুনের তীব্রতার কারণে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। যদি এগিয়ে আসত তাহলে হয়তো জীবিত উদ্ধার করা যেত।

পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পর মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে হতাহতদের বের করা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন